বৃহস্পতিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৬

কাজী মেহেদী হাসান : পাঁচটি কবিতা


সম্পূরক


এই যে আমি একা হতে চাইছি
পৃথিবীর নিয়ম আদি-অন্ত প্রত্যাখ্যান— জেনে গিয়েছি;


তবু এই পরিচয়, দূরত্ব আর নিষেধ' স্বস্তিক চিহ্নের মতো
আমাদের ঘুরে ঘুরে দ্যাখে, চুপ করে-চিৎকারে
পথে আর বাতাসে, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দ্যাখা হবে না আর;

এই জেনে জেনে, কী করে সম্পর্ক— তোমাকে করি অস্বীকার?


কণ্ঠস্বর


কোনো কোনো চিঠি কখনোই ডাকবাক্সের স্পর্শ পাবে না
তবুও খুলে রাখে প্রতীক্ষার ভাজ;
আগুনের কাছে রাখে হৃদয়ের প্রার্থনা, মোমের শরীরের যত কারুকাজ।


দরোজা বন্ধ—
তবু এইসব বৃষ্টির রাতে, কে যেন দাঁড়ায়ে থাকে
ফিসফিস কথা বলে প্রিয়;
আলতো পায়ে তার আলতার দাবি
বলে— 'মিলনের দিনে নাকফুল কিনে দিও'।



সর্বস্ব


পৌষের গিটার জ্বালিয়েছি আগুনে
পৃথিবী তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে;
তবু এক খড়কুটো চোখের
ট্রাফিক সেজে দাঁড়িয়ে থাকে, রাস্তায়-জেব্রাক্রসিং এ
চাঁদের ফ্লাডলাইট যেন থেমে যাওয়া টাইম ট্রাভেল।


তবু বিছানায় মাথা রেখে যতবার শরীর নিয়ে এসেছি
তুমি আমাকে শিখিয়েছো খুন আর ফিরবার কৌশল।



সন্ধ্যার ভূগোল


দুটো খড়ের জামা আর ব্যালকনিতে খসে পড়া নক্ষত্র নিয়ে
জীবিত পাখিদের সংসার। কোকিলের শ্বাসনালী দেখে
একটা হারমোনিকার শখ হয়েছিল সেবার।


তুমি বরং দুটো অর্কিড লাগাতে পারতে?
বিছানায় অনভ্যস্ত শুয়ে বলেছিল সায়ন্তিকা ঘোষাল।
বলেছিল— ওদের দেখে রেখো, অমন সুরেলা জীবন।


সেই থেকে চোখদুটো দেয়ালে টানিয়ে রেখেছি।
তুমি ছেড়ে যাবার পর আরও দুটো বছর।
নজরে রেখেছি হলদেটে অর্কিড;
পাখিদের হাড়ের কঙ্কাল;
হারমোনিকায় বিস্তর ধুলো—


সায়ন্তিকা, কখনও তো বলোনি- তুমি মৃত্যু ভালোবাসো?



প্রতিবিম্ব


তোমার হাতে আয়না ধরিয়ে দিলাম
তাকে নিয়ে হাঁটো—
ডিডেলাসের জীবন্ত পুতুলের মতো হয়তো সে কথা বলবে
সাড়া দিও।


তারপর বহুকাল পর—
আমাকে-তোমার সঙ্গে
তোমাকে-আমার সঙ্গে যোগ করে মনে হবে
আয়না থেকে চোখে
চোখ থেকে সমুদ্রে
সমুদ্র থেকে তোমার হাত অব্দি
ভীষণ মিথ্যেবাদী আয়না
কথা বলা আয়না
আমার চোখের মতো আয়নাকে
কী উৎসাহে শোবার ঘরে জায়গা দিয়েছো চিরকাল।


©লেখক : কাজী মেহেদী হাসান, ঢাকা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন