গল্প নয়
অতসীদের বাড়ির পথে যে গলিটা, তার একদিকে অন্যান্য বাড়ি-ঘর আর বিপরীত দিকে জনস্বাস্থ্য বিভাগের উঁচু দেয়াল। দেয়ালের পরে হাঁটুজলের একটা জলাশয়। এই দেয়ালের উল্টোদিকে যেতে হলে দুই উপায়, হয় দেয়ালের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত গিয়ে অনেকদূর ঘুরে আসা অথবা দেয়ালের মধ্যস্থানে ছোট একটা ছিদ্র আছে, সেই ছিদ্র গলিয়ে জলাশয় পার হয়ে যাওয়া। অতসীর পক্ষে দু'টিই অসম্ভব। এখন তার বাড়ির বাইরেই বেরোনো বন্ধ, এতদূর ঘুরে আসবে কেমন করে। সে যেমন মেয়ে, তাতে করে দেয়ালের ফোঁকর গলিয়ে পুকুর পার হয়ে আসতে পারবে এমনটাও ভাবা যায় না। কেননা এই মেয়ে এতটাই নরম আর সরল যে, আমি চিনিয়ে দেয়ার আগে সে তামাকের ক্ষেত, আলুর গাছ প্রভৃতি চিনতো না। তাছাড়া ওরা অনেক বড়লোক, এদিকটায় বাস করেন জনস্বাস্থ্য বিভাগের গরিব কর্মচারীরা। অতসীদের বাড়ির লোকজন এমনিতেই খুব একটা এদিকে আসে না। তবুও সব জেনেও তো এরকম অসম্ভব একটা মেয়ের প্রেমেই আমি পড়েছিলাম। আমার মন তাই মানে না। কেবলই মনে হচ্ছিল, গত পাঁচ দিন ওর মুখ দেখি না, যদি একবার দেখা যেত!
আমাদের প্রেমের বয়স মাত্র এক বছর। এর মধ্যেই অতসীকে লেখা আমার চিঠি ফাঁস হয়ে গেছে ওর বাসায়। সাহস দেখিয়ে আমি নিজের মুখে প্রস্তাবও পেশ করে ফেলেছি ওর বড় আপাকে। ফলে ওর বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়েছে, আমার রুটি-রুজির একমাত্র উপায় ওদের বাসাসহ আশ-পাশের গোটা পাঁচেক টিউশনি ছেড়ে দিতে হয়েছে এবং সব চেয়ে মর্মান্তিক হলো— ওর সাথে আমার দেখা করা বন্ধ হয়েছে। শুধু দেয়ালের এদিকের এই ছাত্রটির দু’দিন পরে পরীক্ষা বলে আজ একবার আসতেই হয়েছে।
অসম্ভব মন খারাপ নিয়ে আমি ছাত্র পড়াচ্ছি আর ওর কথা ভাবছি। হঠাৎ একবার মাথা তুলে দেখি দরজার সোজা উঠোনে দাঁড়িয়ে আছে অতসী। ওর হাঁটু অবধি কাপড় ভেজা, ঝুপঝুপ করে জল ঝরছে। আমি তাকাতেই ও ঠোঁটে আঙ্গুল চেপে কথা না বলতে ইশারা করে। নিষেধ করতে হবে কেন, আমি তো এমনিতেই কথা হারিয়ে ফেলেছি। আমার হৃৎপিন্ড দুলে দুলে উঠছে। এই মেয়ে কোন সাহসে এবং কী প্রয়োজনে এখানে এসেছে? উঠে ওর সামনে এসে দাঁড়ালাম। সুর্যোদয়ের মতো করে হেসে উঠে ও বললো—‘আপনাকে একবার দেখতে এলাম।’
♦
মজনুর রহমান
রংপুর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন