একটি কবিতা
মার্কিনি কবির মতো কবিতা লিখতে কে বলেছে তোমাকে?
তুমি লিখবে জলের মতো স্বচ্ছ কিছু,
অনুভব করবে নরম সবুজ অথবা গাঢ় নীল—
ময়ূরের পেখম যেমন;
তুমি লিখবে জীবন, লিখবে অন্ধকার
পোড়া মানুষের গন্ধ চেনো তুমি?
বোবা কিশোরীর আর্তনাদ?
অথবা জন্মলগ্নে শিশুর কান্না?
তোমার বৃদ্ধ দাদিমা ছিলো কি কখনো?
দেখেছো সে কেমন করে পান চিবুতে চিবুতে গল্প করতো
তুমি বরং সেসব লেখো যা কেউ লিখতে পারেনি কখনো।
আমার একটা কবিতা ছিলো,
তার রং ছিলো ধূসর, তামাটে, মাটির মতো।
কবিতা দেখলে মনে হতো কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত কোনো ভিখেরির শীর্ণ হাত,
কখনো কবিতাটি রং পাল্টে রাইমের মতো শোনাতো—
টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার…
আমার কবিতায় এক পতিতার জীবনীশক্তি ছিলো,
ছিলো একঝাক কাকের কা কা ডাক,
স্বর্গের নর্তকীদের পায়ের মলের আওয়াজ ছিলো,
কবিতায় একজন মুক্তিযোদ্ধার কবর ছিলো,
সংবিধানের দলিলে যে কথাগুলো নেই, ছিলো সেইসব,
চঞ্চল ডানায় ভর করে উড়ে যাওয়া শালিক ছিলো,
ছিলো অভিশপ্ত এক সাম্রাজ্যের বর্ণনা।
পুরুষের বীর্যস্খলনের সুখের আবেশ ছিলো কবিতা জুড়ে,
ছিলো রমনীর প্রথম প্রেম পরশের অনুভূতি।
সে কবিতা পড়ে দুর্ভিক্ষকে কাছ থেকে দেখা যেতো,
শোনা যেতো শো শো শব্দ করে উড়ে যাওয়া যুদ্ধবিমানের শব্দ।
‘জয় বাংলা’ স্লোগানেও মুখরিত ছিলো সে কবিতা।
তুমি যে কবিতা লিখবে তাতে কি কারো দীর্ঘশ্বাস আছড়ে পড়বে?
কবিতা পড়ে কেউ ভালোবাসার স্বীকৃতি পেতে দৌড়ে আসবে?
মানুষ কি ফিরে পাবে মনুষ্যত্ব?
যুদ্ধ কি একেবারে থেমে যাবে?
অসভ্যতা আর নোংরামি থাবা তুলে দাঁড়ানো মানুষেরা কি ধ্বংস হবে?
মানুষ আজকাল চাঁদে যায়— জানো তো?
মঙ্গলে নাকি কারা ভালোবেসে ঘর বাঁধতে চেয়েছে!
অথচ পৃথিবীতে যুদ্ধ থেমে যাবে এমন কবিতা কেউ জন্ম দেয়নি!
তুমি কি এমন কবিতার পিতা হবে?
ইস্পাত, লোহা, নিকেল, সোনার মতো ধাতুগুলো যদি গলতে শুরু করে তোমার কবিতার উত্তাপে—
তুমি কি তখন পিছু হটে যাবে?
নাকি সেই উত্তাপ নিয়ে জ্বালিয়ে দেবে সব মিথ্যা, কলুষতা আর হিংসেগুলো?
তুমি বরং একটি বিজয়ের গান লিখে ফেলো,
গানের লাইনগুলো হবে লাল সবুজের মতো নির্মল আর কবিতার মতো চঞ্চল।
তুমি আকাশ দেখে বলো ‘ওখানে রোদ উঠবে’—
অথচ আমি দেখি বৃষ্টি নামার অপেক্ষায় সে প্রহর গুণে যাচ্ছে।
তুমি বরং আকাশ লেখো,
আমি বরং কবিতা পড়েই বৃষ্টি নামাবো।
০
আফসারা মীম
... ... ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন