শামশাম তাজিল-এর প্রবন্ধ


ময়ুখ চৌধুরী : জল আর জালের সমীকরণ নির্মাতা



ভালবাসলে ইটও দেয়াল হয়ে যায়। দেয়ালে ভালোবাসার চিহ্ন খুঁজলে মেলে বালু আর সিমেন্টের মিশ্রণ। বিচ্ছিন্নভাবে ইট, বালু,সিমেন্টকে কেউ দেয়াল বলে না। দেয়াল তোলার জন্য উপকরণসমূহকে একত্রিত করণের যে বিদ্যা __তাই ভালবাসা। মনে হতে পারে ভালবাসা শব্দের সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক নাই। আবিষ্কারের চোখ থাকলে সব কিছুতেই নতুনত্ব,  অভিনবত্ব আবিষ্কার সম্ভব।  চোখ কান সবারই আছে, অথচ আমরা শিশিরের শব্দ পাই না। আমাদের নিত্যদিনের অভিজ্ঞতার ভেতরে ছিল, তবু সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর আবর্তন __ এইকথা প্রচারের জন্য ব্রুনোকে পুড়ে মরতে হয়। তার মৃত্যুকে দেখে প্রশ্ন করতে হয়, ব্রুনোর মৃত্যুই কি সত্যকে চিনতে পেরেছে? ভালবাসলে মৃত পাথর তাজমহল হয়ে যায়।

ইংরেজি বর্ণমালারর ২৬টি অক্ষরকে  এলোমেলো কিংবা সচেতনচাবেই পারমুটেশন কম্বিনেশন করলেই শেকসপিয়র হয় না। একজন শেকসপিয়রের ভালবাসার জোরেই বিক্ষিপ্ত বর্ণ আর শব্দগুলো হয়ে ওঠে ম্যাকবেথ, হ্যামলেট কিংবা প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের রসায়ন ওথেলো।  কবিরা ভালবাসেন শব্দকে আর ভালবাসার রসায়ন কবিসৃষ্ট। কাব্যসামর্থ্য, শব্দ ব্যবহার নিপুণতা, সামাজিক ভাষায় অভিব্যক্তি প্রকাশ প্রচেষ্টা __ ভাষায় আনে লাজ, সম্পর্কের কাবিন।

জলের প্রবাহের ভেতর একত্রিত, বরং বলা ভাল _এক হয়ে থাকার প্রবণতা, ঝোঁক। জলের চারিত্র‍্যগুন যেন মানুষেরই অভিব্যক্ত রূপ। জলের উপমা আমাদের মন। মনের মানচিত্রই কবিরা আঁকেন। জলের আছে ত্রি-অবস্থাত্মক গুন। তা মনকেই যেন প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের শরীরে আছে জলের আধিক্য, তেমনি মনের রাজত্বে আছে তার আধিপত্য।  অপরদিকে পাথরও স্থিতাবস্থাজ্ঞাপক। পাথরের শেকড় না থাকলেও সে উন্মুল নয়, উর্দ্ধাচারী নয়। চিন্তা যতই উড়নপ্রবণ হোক মানুষকে জমিতে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে হয়। পাথর তারই সাক্ষ্য বহন করে।

নদী আর নারী কাউকে ঠকায় না। পুরুষ অবগাহনপ্রবণ। নদীর আছে আত্মশুদ্ধিরর অসম্ভব ক্ষমতা,  নারীরও। নারীর সঙ্গে আছে পাথরের আত্যন্তিক মিল। সয়ে যাবার অপরিমেয় সামর্থ্য। নারীকে সহ্যশক্তির কিংবা ধৈর্যের প্রতিমূর্তি বলব না। তার প্রয়োজন নাই। সম্পর্কের কথা তুলে লেখা শুরু করেছি। নারী আর পাথরের সম্পর্ক নিশ্চিত রয়েছে। তাদের মধ্যে থাকে আগুন। নদী আর পাথরের ব্যবহার নিপুণতা অর্থাৎ কঠিন আর তরলের সম্পর্কের মীমাংসা ময়ুখ চৌধুরী কিভাবে টেনেছেন _ তা আবিষ্কারে নজর দেবো।

ময়ুখ চৌধুরীর কবিতায় নদী আর পাথরের মিথষ্ক্রিয়ায় কিভাবে কবিতা গড়ে উঠেছে, কিভাবে তিনি কবিতায় জলের আর্দ্রতা আনয়ন করেছেন, পাথরের স্থিতি দিয়েছেন তা দেখতে চাই। কবিতার রসাস্বাদনে আলোচনা গৌন ভূমিকা পালন করে, তবু কোন কোন কবিতা আলোচনার দাবি রাখে।

১. বইয়ের নাম : অর্ধেক রয়েছি জলে অর্ধেক জালে
২. প্রসঙ্গ: নদী আর পাথরের মিথষ্ক্রিয়ায় ও কবিতা

গ্রন্থভুক্ত কবিতা ৫০টি। নদী শব্দটির ব্যবহার আছে ৪৩ বার। ২২টি কবিতায়।  ;পাথর শব্দ আছে ৪১ বার, ১৩ টি কবিতায়। নদীর নাম এসেছে ৭টি। পদ্মা,  জাহ্নবী, মিসিসিপি, কালিন্দী, গঙ্গা, যমুনা ও কর্ণফুলী। পাঁচটি কবিতা ছাড়া সকল কবিতায় জলের প্রসঙ্গ এসেছে। নদীর সমার্থক শব্দ গাঙের ব্যবহার আছে দুইবার। পাথরের সমার্থক শিলা তাও দুইবার। খুঁজলে যে পাঁচটি কবিতায় জলের প্রসঙ্গ নাই, সেখানেও দূরকল্প সম্পর্ক বের করা সম্ভব। আপাতত সেদিকে যাচ্ছি না।

আইহন গোয়ালা শিরোনামের কবিতায় শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য পুনরাভিনীত হয়েছে। দেবতাদের ষড়যন্ত্রে নপুংসক আইহন গোয়ালার সঙ্গে রাধার বিবাহ হয়। অন্যদিকে রাধা বয়সের বিভেদ, সম্পর্কের বাধা ভুলে কৃষ্ণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে বাঁধা পড়ে।  যদি কবিতার মত করে বলি : প্রেমে পড়লে রাধা একুশ হয়ে যায়। আইহন চরিত্রটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা ছিল না। সবাই রাধা কৃষ্ণকে নিয়েই মেতে ছিল, মুগ্ধ ছিল। নিজের কাম আর প্রেমের আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতা দিতে চেয়েছে তাদের ভেতর দিয়ে। 
কবিকে বলতে শুনি:
দেবতার ঘরে বসে লেখা এক নিয়তি-নাটক,
সংসার-শ্রমিক সাজে দায়বদ্ধ সুত্রধার তাতে।
অবিচারে ফুঁসে ওঠে আজও কালিন্দীর বোকা জল
কাহার গাভীর দুধ পান করে সাপ নিশিরাতে!

নদীর আত্মশুদ্ধির সঙ্গে অবিচারেও ফুঁসে ওঠে। অবিচারের বিরুদ্ধাচারী নদী তখন নদী থাকে না, মানুষ হয়ে যায়। এবং আরও দেখি, সাপের আচরণ,  বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে সাপ গাভীর দুধ পান করতে পারে না। তবে মানুষ যখন সাপ হয়ে যায়, আমাদের করণীয় কিছু থাকে না। তবে কবিতায় এই সাপ কে? তার আঁচ পাওয়া কঠিন নয়। কবি যেহেতু কিছু স্পষ্ট করেন নাই, আমরাও কষ্টকল্পনা করে নিছে অনিচ্ছুক। তবে এই কথা বলে রাখি, মহাভারতের কৃষ্ণ আর শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের কৃষ্ণ এক ব্যক্তি নন। কবি আমাদের বিমুঢ়তার সম্মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলেন:

স্বপ্নে ঘুমে-মাখা রাত্রি, তবু ভোরে চোখ করে জ্বালা
প্রত্যেকের মধ্যে হাসে পরাজিত আইহন গোয়ালা

ঘরে যার পরকীয়স্ত্রী, তার হাসির শব্দে ভীত হয়ে উঠি। আইহন গোয়ালা হেসে সে ভয় দূর করেন না, ভয়ের ভেতর অনিশ্চিতি আর পরাজয়ের বেদনাকে সঞ্চারিত করে দেন।

নদী আর তোমার পার্থক্য' কবিতায় অবশ্য নদীকে নারী ভাবা যায় না। তাকে পুরুষ মনে হয়। এখানে নদী নিজের চলার পথে নারীর কলস ছুঁয়ে দেখে। প্রত্যেক পুরুষ তার নারীকে ছুঁতে চায়। নারীর শরীর বেয়ে নদীও চায় উষ্ণতা,  ডাঙার বিশ্রাম। 
দেখি, 'পাথর আর তোমার পার্থক্য ' কবিতা কী বলে। কবিতার শরীর পাঁঁচটি অংশে বিভক্ত। 

পাথরকে পাথর বলো না,
সবুজ শ্যাওলা জানে পাথর সে নয়,
আরও জানি আমি,
শ্যামলী পাথর নয়, পাথরের কিছু দামী।

পাথরকে যদি প্রেমিকের প্রতিভূ হিসেবে ভাবি, তখন কী দেখতে পাই? দেখি,  শ্যাওলাও বদলে যায়, হয়ে ওঠে নারীর শরীর। শ্যামলী নাম্নী নারী পাথর নয়,তার চেয়ে অর্থাৎ পুরুষের চে দামী। মূল্যবান। অর্থের মূল্যে এই দাম নির্ধারণ সম্ভব নয়। কবি প্রেমিকাকে জিতিয়ে নিজে জিতে যান। 

সিন্ধু সভ্যতা : দুই পর্ব' কবিতায় নারীপর্বে নদী এবং পুরুষপর্বে পাথর __ নারী আর পুরুষের প্রতীক। 'নদী-পাথরের গল্পে'ও একই উপাখ্যান। 'যদিও নদীর মতো, সমুদ্র দর্শন,  অন্ধকারে অন্ধ জোনাকী __ এইসব কবিতায় নারী এসেছে প্রেমিকার প্রতিভূ হয়েই। এই কবিতাগুলোও আলোচনারর দাবি রাখে। তবে এইক্ষেত্রে আমরা অভিনিবেশ সহকারে কবিতা পাঠে মন দিতে চাই।
ময়ুখ চৌধুরী বলেন:
যদিও নদীর মতো, তবু তুমি জলের অতীত;
রোদনরহিত চোখে শুধু দেখো, দেখে যাও শুধু
ফিরে যাচ্ছে রোদের নাবিক।
নদীর তরল দেহ নগ্ন সাহারার চে'ও ধু ধু,
জ্যামিতি বাক্সের চাঁদ, পড়ার টেবিলে ঘড়ি খুবই স্বাভাবিক ;
জল কাঁপে, হাওয়া বয়,ফিরে যায় উজ্জ্বল নাবিক।

বৈপরীত্য আমাদের অন্তকরণের প্রকাশ, জীবন যেখানে দ্বিধাবিভক্ত সেখানে আমরা সমসাম্য আশা করতে পারি না। আধুনিক শব্দের যেরূপ ব্যবহার প্রচলিত তার সঙ্গে ময়ুখ চৌধুরী সহমত পোষণ করেন না, তবু বলতেই হয়, আধুনিক যন্ত্রসভ্যতার যন্ত্রণা তিনি অনুভব করেন, তা তাকে ক্লেদাক্ত করে, পোড়ায়। আধুনিকতার গ্রাস থেকে তার কবিতাও মুক্ত থাকে নি। ক্ষত বিক্ষত মনের, পেয়ে হারানোর বেদনা কিংবা পাবার আকুতি, না পাওয়ার জ্বালা সবকিছুইই তার কবিতায় বর্তমান, উপস্থিত। চর্যাপদের হরিণের উপস্থিতি রয়েছে তার কবিতায়, আছে মধ্যযুগের কবিতার পরিচয়-প্রতীক। এবং সেগুলোও পরিমার্জিতরূপে পেয়েছে আধুনিকতার মর্যাদা। প্রেমকে অনেকে আধুনিককালে তুচ্ছজ্ঞান করে। অথচ সত্য হল,  পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলো প্রেমকে কেন্দ্র করেই লিখিত। পদার্থের আছে বিপরীত অবস্থান,  মিলন, ইলেক্ট্রন -প্রোটন।  গণিতে যোগ-বিয়োগ,  দর্শনে ভাববাদ-বস্তুবাদ, সমাজে শোষক-শোষিত, কবিতার ক্ষেত্রেও আছে মিলন- বিরহের কবিতা। মানুষ মিলন প্রত্যাশী, অথচ যিনি বিরহের কবিতা লেখেন তিনি অধিক প্রিয় হয়ে ওঠেন। আমাদের জীবনে প্রাপ্তির চাইতে অপ্রাপ্তির বেদনা দুর্মর,  অধিক সত্য। তাই যেন মূর্ত হয় :

নওঝিল আগুন হয়ে মহুয়ার বনে ফিরে আসে,
আত্মপ্রতারক ঘুমে কেনো মিছে আত্মার হনন?
সকল পাওয়াই বৃথা, শোনো মেয়ে, শেষ সর্বনাশে
মানব-জনমে আছে মায়াবী দুঃখের প্রয়োজন।

কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম এক বন্ধুকে : জলের গেঁথে আছি। এইকথা শুনে সে কেমন তাকালো। জিজ্ঞেস করলাম, এমন তাকানোর কারণ কী। সে উত্তর দিল, এমন ভাবনা কোত্থেকে তোর মাথায় এলো?
উত্তর দিলাম:

অবিকল চেহারার ফেনিল ব্যবস্তা থেকে
আমার নদীকে আমি কোনদিন চিনে
বার করতে পারব না জানি।
আমি তাই মোহনার মুখে
স্মমোহিত পাথরের ছদ্মবেশে অপেক্ষায় আছি,
কখন আমার নদী ফিরে আসবে জোয়ারের নামে। (নদী পাথরের গল্প) 

প্রতিটি ব্যক্তিমানুষই পাথরের জীবন যাপন করে। আঘাতে জর্জরিত হয়। সয়ে যায়। তবু অপেক্ষায় থাকে কোন এক অজানা স্নিগ্ধতার আশায়। যতটা জেনেছি, পাথর নরকের আহার হবে,  আর পৃথিবীতে মানুষই পাথর। সে যাপন করে নরকের যন্ত্রণা। বিষন্নতার মত দুর্বহ। তবু মনের ভেতর খলবলে মৎস্যের দরদ আঁকে সুন্দরের স্বপ্ন। আশা করে জলের প্রবাহের অর্থাৎ গতির। প্রাণচাঞ্চল্যের।

ভারতীয় দর্শনে মানুষের তৃতীয় নয়নের কথা বলা হয়েছে। তৃতীয় নয়ন মানুষের প্রজ্ঞার প্রতীক। দেবী দূর্গার আছে তৃতীয় নয়ন।  চিত্রশিল্পী কিবরিয়ার একটা শিল্পকর্ম দেখে অনুপ্রানিত হয়ে প্রেরণার মুহুর্তে তিনি লেখেন 'সংসারী পাথর' কবিতাটি। কবির সঙ্গে একদিন এই নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি বলেন, কিবরিয়ার চিত্রে প্রবাহমানতাকে আবিষ্কার করেন। তার কাছে প্রবাহমানতাই চিরন্তনতা। সেই চিত্রে যে eternity খুঁজে পেয়েছিলেন তা অবলম্বন করে কবি লেখেন : 
দুইপাশে তিনটি পাথর
আমাদের দুটি করে চোখ,
তৃতীয় পাথর তাই চোখেও পড়ে না।

বৈজ্ঞানিকভাবে আমরা দুচোখে একটা নির্দিষ্ট ফোকাসেই দৃষ্টিকে রাখতে পারি। চাইলেও একের অধিক বস্তুর ওপর চোখ রাখা যায় না। যদিও এক সঙ্গে অনেক কিছু দেখা সম্ভব  কিন্তু দৃষ্টি স্থির থাকে একক বস্তুর ওপরই। যদিও বিজ্ঞান বলছে, কপালের মাঝখানে আরও একটা চোখ বিকাশের উপাদান ছিল, যে কারনেই হোক তা বিকশিত হয় নি। তবে মানুষের বোধিসত্ত্বাই তৃতীয় নয়নের কাজ করে। কবিতা তৃতীয় পাথর অবিকশিত তৃতীয় নয়নের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। 
এই কবিতাতেই তিনি বলেন:

কোন এককালে পাথরের সাথে পাথরের বিয়ে হতো,
তাদের বিয়ের রাতে পাথরে পাথর ঘষে
মানুষেরা সভ্য হয়েছিল।

এই কবিতা আলোচলার নয়। অনুধাবনের। পাথর আগুনে পোড়ে না। এই বৈজ্ঞানিক সত্যকে কবিতায় তুলে এনেছেন।

পাথর কখনো তাই আগুনে পোড়ে না,
ছাইচাপা মানুষেরা এই সব অতীত জানে না।

পাথর আগুনে জ্বলেও যেমন পোড়ে না, মানুষও পোড়ে কিন্তু পাথরের মত সেই নির্বিকার, নিশ্চুপ। মানুষের জীবনের আপাতসহজ কিন্তু পাষাণসত্যটাকে ময়ুখ চৌধুরী ব্যক্ত করেন এইভাবেই। যুক্তি আর হৃদয়বৃত্তির মাঝে বিরোধ নাই। তবু কবি হোল্ডার্লিন বলেন,  যুক্তি আর হৃদয়বৃত্তির যে কোন একটা প্রকাশ করতে। কেননা যারা যুক্তি অগ্রাহ্য করে, তারা যুক্তিশীলকে যেমন আঘাত করে, আহত করে, তেমনি যিনি হৃদয়বৃত্তির চর্চা করেন তাকেও আঘাত দিতে বাঁধে না। 
কবি বলেন :

একদিন পাথরেরা সংসারী ছিল, __
আমরা তাদেরই বংশধর,
যদিও পাথর নই
তবু সংসার করি বুকে বেঁধে কঠিন পাথর।
এই কবিতা পড়ে বিপন্ন বোধ করি। বিহ্বলতার পরিবর্তে বিমুঢ়তা পেয়ে বসে। গতির বিপরীতে জড়তা, বেদনার বদলে ভয়,আবিষ্কারের পরিবর্তে শঙ্কা আমাদের বুকে চেপে বসে। আত্মরূপ খুঁজতে গিয়েও অজানা অচেনা এক আমির সম্মুখীন হই। আত্ন অনুসন্ধান আমাদের দেয় নতুন দৃষ্টি। কিন্তু তার দিকে তাকানো যায় না। নতুন আমিকে স্বীকার করে নেয়া সহজ নয়। আঘাত সয়ে সয়ে জীবন পাড়ি দিলেও কবিতার সত্য এমন এক প্রহেলিকার ভেতর টেনে নেয় আমাদের যেখানে কেবল পাথরের প্রপাত শুনি। মানুষও কি নরকের জ্বালানি হবে পুনরায়?

এই জিজ্ঞাসার সামনে দাঁড়িয়েই আপাতত শেষ করছি ময়ুখ চৌধুরীর অর্ধেক রয়েছি জলে অর্ধেক জালে'র পাঠ__ তার কবিতাই হয়ে উঠুক কবিতার প্রধান আলোচ্য বিষয়।

●লেখক : শামশাম তাজিল, ঢাকা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন