বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

নাদিয়া জান্নাত : পাঁচটি কবিতা


নিবেদন

এতখানি অস্থির হলে চলে!
পা থেকে শুরু করো।
না, না...!! হাত দিয়ে নয়,
মুখ দিয়ে খুলে নাও সোনালী নুপুর।
এবার চুম্বনে সিক্ত করো পায়ের পাতা,
ঠোঁট দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখো নীল আঙ্গুল।
এবার নতজানু হয়ে বসো,
পদ্মনাভীতে রাখো তোমার জিহ্বাফলক।
এই তো পুরুষ হয়ে উঠেছ তুমি,
আর আমি হয়ে উঠছি তৃষ্ণাময়ী নারী।

এতখানি অস্থির হলে চলে!
এবার হাত দিয়ে স্পর্শ করো লাবণ্যসাগর।
চাঁদের পাহাড়ে রাখো তোমার শকুন ঠোঁট।
বলয় বৃন্ত নিয়ে খেলা করে যাও।
পুরুষ তুমি, শিশিরে চুমু খাও।
এখানে, আগুনের কাছে এলে
নদীতে জমতে শুরু করে মৃত্যুর গন্ধ।
পুরুষ, মৃত্যু চাও?
এখানে আসো। ঝাপ দাও আগুনে। আগুনে পুড়ে পুড়ে অমর হয়েছে তোমার পূর্ব পুরুষ।
উঠে আসো যুবক, পাশেই কাশবন।
বনের পথ ধরে নদী। নদীতে জেগে যাচ্ছে চর।
ক্লান্ত পুরুষ!! তুমি চাইলে এক দণ্ড ঘুমোতে পারো।


ফুল, পাখি এবং প্রেমের জন্য

মণিকাদের স্বামীপ্রেমে যৌনসুখ ছাড়া কিছু নাই। এসব দেখে শুনে আমি বন্ধ করে দেই বিবাহপ্রথা।
চুরমার অন্ধকারে ভালোবাসতে হবে ফুল এবং পাখি-এই হলো নতুন সংবিধান।
আমি জানি একদিন উনুনের কাছাকাছি চলে আসবে রাজহাঁসের ঘ্রাণ। সেই দিন বিবাহ ব্যারিকেড ক্রস করে জন্ম নেবে প্রেম।
একদিন ফুল ও পাখির মতো মনিকারা ভালোবাসবে স্বামী এবং যৌনতার জন্য বেছে নেবে ঝলসানে বুঁনো রাজহাঁস।


ভালোবাসা

অশোক-নবমীর দিন, চারটে কুকুর আর একশো শুয়োর ধস্তাধস্তি করছে জোছনায়।
সম্ভবত, নদী আর জলের মাঝে উঠ-বোস ধস্তাধস্তির নাম ভালোবাসা।
ভালোবাসা এক নবীন কিশোর, যে সাবধানে ছুঁয়ে দেয় তার সদ্য কামানো দাড়ি গোঁফ।
তারপর আলগোছে নিজের হাতেই ভালোবাসে নিজের নিম্ন শরীর।
সেই কিশোরের কান্না শুনে যাদের কান বধির হয়ে আসে, তাদের জন্য শূণ্যের বেতারে ভেসে আসে অজস্র চুমু।

রক্তের উত্তেজনা এবং কামনা বিষয়ক কবিতা গুলো মূলত ভালোবাসা।
ভালোবাসা, অন্তহীন উঠোনে বসে থাকা শ্যামল দাদা, যে নিজের হাতে নাভীতে রেখেছে উত্তাপ।
ভালোবাসা হলো বালকের শরীর, যা ছুঁয়ে দিলে রক্তের ভেতর বয় টগবগে স্রোত।
ভালোবাসা অভিজ্ঞ কোন পুরুষ, যে ঘরের মধ্যে চাষ করে বুঁনো ফড়িং,  তারপর নিজের হাতেই ভালোবাসে ঊর্ধ্ব শরীর, নিম্ন শরীর।
লতা-পাতা এবং ফুল বিষয়ক শব্দ গুলো মূলত ভালোবাসা।

নাদিয়া জান্নাত
রংপুর।

আমাদের প্রেম,কাম এবং সিগমুন্ড ফ্রয়েড

ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ অব্দি থেকে ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল আমাদের মন।
মন শব্দটি আবিষ্কার করতে গিয়ে আমি মনে মনে কল্পনা করি কামেচ্ছা নিবারণ পুরুষ।
এবং এই কাম শব্দটিকে বড় আদ্র ও পিচ্ছিল মনে হয় আমার।
আমি ধীরে ধীরে খুলে বসি সিগমুন্ড ফ্রয়েড।
নিষিদ্ধ থিউরি ঘাটতে ঘাটতে আমি ভুলে যেতে বসি পাপবোধ।
জরায়ু থেকে জঠরে খুঁজতে বসি আমার প্রেমিক অ্যান্টনির মুখ।
আমি হাপাতে থাকি। হাপাতে হাপাতে খুঁজতে থাকি মদের গ্লাস এবং অ্যান্টনির যৌন ত্বকের সুদীর্ঘ গভীর ফাটল।

আনন্দে লাফিয়ে উঠছে আমার জিভ।
আমার ফালতু মগজ বিশৃঙ্খলতা থেকে বেরিয়ে এসে কষতে থাকছে শারীরিক অঙ্ক।
চুমুর স্বাদে গুলিয়ে যাচ্ছে আমার গা।
ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছি আমি।
আমি বেছে নিচ্ছি চৈত্র মাস ও কুকুরের জীবন।
আমি ঘুমোচ্ছি, আমি জাগছি, আমি ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছি মৃত্যুর কোলে।
আমার ঘুম, জাগরণ, এবং যৌনতার গল্প গুলো লিখতে গিয়ে আমি আবারো ভালোবাসছি সিগমুন্ড ফ্রয়েড।


রক্তের ভেতর শঙ্কিত শহর

রাস্তায় বের হতেই বন্ধুর বন্ধু পরিচিত হতে আসে,
হাত বাড়ায়, হ্যান্ডসেক করে।
তারপর মৃদ্যু হাসিতে জানান দেয়,
তার শরীরে দারুণ খিদে।
আমি বুঝতে পারি- আমার নতুন বন্ধু খেলুড়ে পুরুষ,
রক্তের ভেতর পুষছে লাগামহীন ঘোড়া।
ওর আশ্বাসে, বৈজয় মালার নাচ,
যে কোন সময় শকুনের মতো খুঁজে নেবে বুকের মাংসঢিবি;
তারপর চুষে খাবে রুপ আর রক্ত।

ভদ্রতাবশত আমরা পাশাপাশি হাঁটি।
একসাথে আসি মেলায় কিংবা পার্কে।
আমার নতুন বন্ধু মৃদু হাসে।
তারপর লোকলজ্জা ঝেড়ে ফেলে ডিঙ্গাতে থাকে শরীরের প্রাচীর।
এবং এরপর হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয় বহুকালের জন্মান্ধ যৌবন।
আমি ধীরে ধীরে আমার অস্তিত্ব টের পাই।
আমার শরীরে কবন্ধ প্রেমিক,
রোমকূপে খেলুড়ে পুরুষ;
আমার রক্তের ভেতর একটি শঙ্কিত শহর টের পাই আমি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন