সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬

আহমেদ অরণ্য -এর একগুচ্ছ কবিতা



চশমা

১.
ছোটবেলা থেকে, চশমা ছিল আমার দূর্বল দিক। ফেরি করে বিক্রি করতেন যিনি-তাকে মামা সম্বোধন করতাম। তিনি মূলত: চুরি ফিতা লিপস্টিক সহজ কথায় বলতে, নারী ক্রেতা তাঁর পেটে ভাত যোগান করতো।
চশমার পাশাপাশি, আমি নেলপালিশও চেয়ে বসতাম। মানে আমাকে বিনামূল্যে দেয়ার ইচ্ছাটাই তাঁর বেশি ছিলো। মামা সম্বোধন করতাম, তাই হয়তো। নয়তো একটি মাত্র পুরুষ ক্রেতার কাছ থেকে টাকা নিতেও হয়তো তিনি লজ্জাবোধ করতেন।...
আমি নেলপালিশ-নখে। চোখে চশমা পরে খুব ভাব নিয়ে ঘুরতাম শহর। সব কিছু রঙিন। চোখের জল রঙিন। বাস্তুহীন পাগল রঙিন। এবং ক্ষুধার্ত ভিখিরি আর রাগান্বিত সূর্য অনেক লাজুক ছিলো।...
-আহা, কী শৈশব না কাটিয়েছি।...
এখনও চশমা ব্যবহার করি, কিন্তু রঙিন নয়- স্বচ্ছ। যা ব্যবহারে আমি পশু হয়ে উঠি।...

২.
সাধারণত, চশমার বহিঃ দৃশ্যগুলো চমৎকার বেশ। যেমন ধরুন- হাত, পা, চোখওয়ালা সুন্দর প্রাণী, তারা-রহস্য রাখতে জানে। তারা গলা ছেড়ে গান গায়। বাচ্চা প্রসব করে। আরও অন্যান্য ইতিহাস শুনে থাকবেন।
অর্থাৎ, আজকের এই সব দৃশ্যপটে, যা দেখছেন তার মূল ভূমিকায় মানুষ এবং চশমা। আর বাকিগুলো আধাভৌতিক।


জীবন বিষয়ক

১.
স্বপ্ন জলসায়- মৃত্যুকে বোকা দেখায় ভেবে,
শুকনো পাতার গহীনে আর উপকরণ খুঁজি না।
নতুন পাঠ্য বই।-তোমরা আপেলকে সুন্দরী বলো, শুনে-
মুক্তমনা হয়ে উঠি। এবং মুচকি হেসে তোমাদের ভুলে যাই।

২.
মুদ্রার শব্দে কেমন জানি আঁতকে উঠি-
বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি।
বন্যাত্বক অভিমান নিয়ে জল, আপন ছন্দে...
যদি- সাঁতারযৌবন, একা-একটি মাছ হতাম।


জীবন সংক্রান্ত

১.
দেহটাকে একটু শান্তি দেবার বিশেষ কাজে হয়তো হাঁটছি...
অথবা সময়ের সাথে মারবেল খেলবার অভিনয়টুকু করি মাত্র।

২.
বিনিময় বিশেষণে শুধু কয়লা পাওয়া যায়। সাথে,
সাঁতারহীন মাছ, রাবার বিশেষ মন, আর উলঙ্গ আয়নায়-
                                           বিশ্রি একটি কবিতা।
তারপর-পথে,
কুকুরটির ব্যাস্ত সময় কাটে ইতিহাস রচনায়।

৩.
বৃষ্টি শেষ হলে-ই দেখবে-
পিপঁড়ের ঘর কাদা মাটির মতো আঠালো।


তোমাকে উচ্চারণ

১.
আজ গভীর মগ্নতায় কাটিয়েছি সময়। যেমন সেকে- হেঁটে মিনিট আর মিনিট হেঁটে ঘন্টা অতঃপর ঘন্টার সাথে সংঘবদ্ধ ঘন্টারা দল বেঁধে হাঁটছে আর আমি ভাবছি...ভাবতে ভাবতে তোমর আমার স্মৃতির অনেক গভীরে আমি, হ্যাঁ এই কথাগুলো আমি তোমাকে বলছি। এখন আমাদের নেপথ্যের স্মৃতির অনেক গভীরে আমি একজন আলোচকের মতো বসবাস করছি। অনেক দিন তোমার নিস্পাপ মুখখানা না দেখে আমি বড় ক্লান্ত, তাই বাধ্য হয়ে নেপথ্যের স্মৃতিগুচ্ছ হাতড়িয়ে পূণরায় পাঠ করছি। আর একা একা নীরব ছন্দে হাসছি, কেনো জানো? তোমার স্বপ্নীল বাসরের গল্প আর মিনিটে মিনিটে তারালাপের সুর বেজে ওঠা। তুমি বলতে পারো এটুকু করি বলে ফের নীরব ছন্দে হাসার কি হলো? আচ্ছা বলি- যখন তারালাপের সংস্পর্শে আসি তখন স্বপ্ন ডানায় ছবি আঁকতে শেখো আবার বলো আমার কন্ঠে নাকি কাব্য নাচে! এই দেখো, মাত্র দু’দিন রাগ করে কথায় কথায় কথার কবিতা লিখিনি ব্যাস তুমি গ্রহণ ছেড়ে উপোস করলে। পরে জানলাম তোমার প্রিয় সুঁইও দুঃখিত। তুমি যে সুঁই তোমার রোগ প্রতিরোধে ব্যবহার করতে ভয় পেতে ঠিক সেই সুঁই পুশ করে সারারাত তোমার নিস্পাপ নীড়ে তরল বীজ বোনা হলো। তাহলে তুমিই বলো এই নেপথ্যের স্মৃতি ভেবে আমি হাসবো না? তবে তুমি এই পংক্তি উচ্চারণ করে যাই ভাবো আমি কিন্তু মোমের মতোই গলছি।

২.
পুরনো সময়ে বসবাস করি। খুব সহজ কাজও নয় এবং যা করে থাকি প্রায়, যেমন শৈশব, কিশোর বয়স। খেলাধুলা নিয়ে তারুণ্য ভরা মারামারি, আর প্রেম তোমার । যার ব্যথা আজও অনুভবে- ঘোড়া দৌড়, আর বয়স যেমন। তোমার অহংকার, ছেলে মানুষি পবিত্র পুঁথি পাঠের মতো পাঠ করি আজও- মধুর লাগে। তোমার বেলকনির কথা মনে আছে? স্বপ্ন ফ্লাটে তুমি আমি বেলকনি আর চা খাওয়ার দৃশ্য।
-আমি হাসি। স্বপ্ন এতো শান্তি - ভেবেও অবাক লাগে।

- কেমন আছো তুমি? জিজ্ঞেস করে আমাকে ভাবতে বলবো না। আমি সুখে আছি। আর সুখে থাকবোই না কেন, আগের মতোই তো আছি। সুন্দরী  নারী দেখলে লজ্জায় লাল হয়ে যাই- কেউ বুঝেনা, শরীরের বর্ণ কালো। তুমিতো জানো কত শয়তান... বোকা ছিলাম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন