মেনু

শিস খন্দকার'র কবিতা...


মৃত্যুঞ্জয়



অর্পিতা দি,
তুমি সেদিন হাসতে হাসতে যখন আমায় জড়িয়ে ধরলে; আমি সত্যি-ই বাকশূণ্য হয়ে পড়েছিলাম। মৃত্যুঞ্জয়—যে ছেলেটি তোমায়...শুধু সে কেনো—তুমিও তো তাকে কম বাসোনি?

তখন যুদ্ধের মাস দু'য়েক পেরিয়েছে। আমি আগেই বুঝেছিলাম, তার জন্য ভিতরে ভিতরে তুমি কিছু একটা লালন করো। পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে আমাদের দুইতলা বাসার পাশের রাস্তায় দাদা যখন মার্বেল খেলতো, তুমি সিঁড়িঘরের পাশের ছায়াটুকুতে রেলিং ধরে পুরোটা খেলা দেখতে। পাড়ার মাস্তান টাইপের ছেলেদের সঙ্গে দাদাকে একদিন চুরুট টানতে দেখেছিলে; পরে কাছে ডেকে কণ্ঠে প্রগাঢ় প্রবীণ স্বর নামিয়ে কেমন শাসিয়ে দিলে—'আর কখনো যেনো না দেখি।' সত্যি সত্যি দাদা তোমার কথা রেখেছিলো। সেদিনের পর হতে দাদাকে আর দেখা যায়নি! আমার হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো—'তোর দিদিকে দিস।' এটাকে তবে চিঠি বলা যেতে পারে! তুমি চিঠি পেয়ে পড়ে কেমন লাল হয়ে গেলে! সেদিন-ই নিশ্চিত হয়েছিলাম দাদাও...

তুমি রোজ চোখে উষ্ণ জল গড়িয়ে প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে। তুমি রোজ আমায় দাদার কথা বলতে। তুমি শুধুই আশ্বস্ত হওয়ার মতো একটি উওরের আশায় আমায় রোজ রোজ প্রশ্ন করতে—'সে কবে ফিরবে?'

যুদ্ধের আরও ছ'মাস পেরিয়ে গেলো। শোষণ আর স্বাধীনতার সংঘাত হলো। দিগ্বিদিক রক্ত আর মৃত্যুর উল্লাস হলো। 'মৃত্যুঞ্জয়'—নামের ছেলেটিও হয়তো মৃত্যুর কাছে হেরে গেলো! অতঃপর যেদিন বিজয় এলো—তুমি সেদিন হাসতে হাসতে আমায় জড়িয়ে ধরলে।

উড়ন্ত লাল-সবুজ পতাকা দেখে তুমি এখনও রোজ হাসো। কেনো হাসো দিদি? মৃত্যুঞ্জয়দের কি সেথায় দেখা যায়?


©লেখক : শিস খন্দকার, রংপুর। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন