পুতুলের কান্নাকথন
তোমার হয়তো মিথ্যেগিরির চূড়োয় উঠে নাচতে হবে
কাঁচের চুড়ির করুণ শব্দে ভাঙবে যখন স্বপ্নালু রোদ
তোমার হয়তো বৃষ্টিবিলাস উপন্যাসই লিখতে হবে
চাবি দিলেই নৃত্য কোরো, পুতুলনাচের সুতোর তালে
সূত্রগুলো রপ্ত করো, বাঁচতে হলে নাচতে শেখো
তোমার হয়তো ক্রোধের ম্যাচে আগুন জ্বেলে রাঁধতে হবে
-- তবে আমার পুতুলগুলো? রাজকুমারের বিয়ে দিলাম
তার কী হবে? রাজ্যে নতুন দুয়োরাণী, তার কী হবে?
মুখপুড়িটা! সাধে কি আর তুই-তোকারি করি তোকে?
খেলনা রেখে চল শিখে নে নকশী সেলাই, রান্নাবাড়া
স্বামী সেবার বিবিধ ঢঙ, ঘোমটা-টানা এবং কিছু
তুষ্ট রাখার ছলচাতুরী, বাসন থেকে বালিশ পূজো।
-- ওসব আমার সইবে না মা, আমি তোমার আচল ছিঁড়ে
নতুন একটা রাজ্য বানাই? তোমার মতো গিন্নিপনা
সইবে না মা। আমি বরং স্কুলে যাই - স্বপ্ন শিখি?
লক্ষ্মীমেয়ে, বুঝিস না ক্যান? আমরা হলাম বাপের বোঝা
আমরা হলাম বাপের ঘরে পরের ছেলের আশ্রিতজন
হয়তো তোকে কাজল টেনে কালির প্রলেপ মুছতে হবে
পেটের ভেতর জ্বলন্ত এক উনুন রেখে হয়তো তোকে
অগ্নিশিখা ঢাকতে হবে, আয় শিখে নে মুখ বুজা নট
আয় শিখে নে আচল টেনে দাগ লুকোনো সমাজনীতি
-- ওসব আমার সইবে না মা। আমি বরং অংক শিখি
আমার একটা স্বপ্ন আছে। স্বপ্নজুড়ে স্বাধীন আকাশ
আকাশ জুড়ে অগুনিত উড়ছে পাখি - উড়ছে পাখি
হঠাৎ হঠাৎ পাখিগুলো প্লেন হয়ে যায়। উড়োজাহাজ!
পেটের ভেতর হরেক মানুষ। পাখির মত স্বাধীন মানুষ
আমি বরং পাখি হবো। পাখির মতো মানুষ হবো
সোনামেয়ে, এসব অলীক স্বপ্ন রাখো। আমরা দাসী
পুতুল রাখো, অংক রাখো। তুষ্ট রাখার মন্ত্র শেখো
তোমার হয়তো একলা থাকার পবিত্র প্রেম পুষতে হবে
-- মানুষ হয়ে মানুষ পুজো! ওসব আমার সইবে না মা
চুপ করো হে, কথার পিঠে কথাগুলো গিলতে হবে
তুমি আমার পিঠ দেখোনি? পেটের ভাজে দাগ দেখোনি?
মাঝনিশীতে কান্নাচাপা শোক দেখোনি? মানুষ হবে!
মেয়ে, তোমার কান্নাগুলো পাপড়ি চেপে ঢাকতে হবে।
-- ওসব আমার সইবে না মা, ওসব আমার সইবে না মা
তুমি হলে মালার বকুল, গন্ধ ধরে রাখতে হবে
-- ওসব আমার সইবে না মা, ওসব আমার সইবে না মা
শুকনো হলেই পতিতজন, ঘরের ভেতর ঘর দাঁড়াবে
-- ওসব আমার সইবে না মা, ওসব আমার সইবে না মা
লক্ষ্মী মেয়ে, আমি তোমার বাবার পুতুল। সুতোয় নাচি।
০
কবির কল্লোল
ঢাকা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন