মেনু

দীপু মাহমুদ-এর গল্প


গহিনে যাই



বিকেল হচ্ছে। শীতের বিকেল। এখন হুট করে সন্ধ্যা নেমে আসে। তিতাস শহিদ মিনারের ঢালে মাথা ঝুঁকিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তার মন খারাপ। খুব বেশি খারাপ। দোলা আসবে। দোলা এলে তিতাসের মন উৎফুল্ল হওয়ার কথা। তার মন হয়ে আছে বিষণ্ণ।
আজকের ঘটনা শুরু হয়েছে দুপুরবেলা। তিতাস ক্লাস শেষে আবুর ক্যান্টিনে খেতে গেছে। দোলাও খেতে এসেছে। ওরা দুপুরে আবুর ক্যান্টিনে খায়। দোলা বলল, বিকেলে ছবি তুলতে যাব। পদ্মায় সূর্যাস্তের ছবি।
 দোলার ছবি তোলা নেশা। সে ডিএসএলআর ক্যামেরায় ছবি তোলে। তার ব্যাগে থাকে ক্যামেরার কয়েকরকমের ল্যান্স। তিতাসের মনে হয় ছবি তো একটা লেন্স দিয়ে তুললেই হয়। দোলা তা করে না। কাছের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরায় একরকমের লেন্স লাগায়। আবার দূরের ছবি তোলার জন্য অন্যরকমের লেন্স।
তিতাস বলল, বিকেলে যাব কীভাবে? রিহার্সাল আছে। পরশু নাটকের শো।
দোলা রেগেছে। সে শান্ত স্বভাবের মেয়ে। কখনো অস্থির হয় না। দোলা কাঁধের ব্যাগ বেঞ্চের একপাশে সরিয়ে রাখতে রাখতে বলল, আমার জন্য তোর একটুও সময় হয় না। বেশ, থিয়েটার নিয়ে থাক।
তিতাস দোটানার ভেতর পড়ে গেছে। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। পরশু দিন নাটকের শো। গ্রুপে গিয়ে আজ বলা যাবে না, রিহার্সাল করব না। দোলার কথা ফেলতে পারবে না। দোলাকে সে ভালোবাসে। শুধু ভালোবাসে বললে তার ভালোবাসা পুরোটা প্রকাশ হয় না। বিশেষ ভালোবাসে। দোলা তাকে ভালোবাসে কিনা বোঝা যায়নি। সে সব সময় রাগারাগি করে। তিতাস একদিন বলেছিল, শোন দোলা, তোর সবকিছু আমার ভলো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে। তোকেও ভালো লাগে। ভীষণ।
দোলা বলল, বোকা বোকা কথা বলবি না। এখন বলছিস ভালো লাগে। দুইদিন পর বলবি বিয়ে করব। এইসব ন্যাকামো মার্কা কথা আমাকে শুনাবি না। আর শোন, কখনো প্রেম-প্রেম ভাব করবি না। তাহলে ধাক্কা দিয়ে এক হাজার গজ দূরে সরিয়ে দেব।
তারপর থেকে তিতাস তার ভালোলাগার কথা বলেনি। তিতাস করুণ চোখে দোলার দিকে তাকিয়ে বলল, পরশু নাটকের শো। তারপরের দিন যাই?
 দোলা হাত ধুয়ে এসেছে। টেবিলে ভাত দিয়ে গেছে। ভাত থেকে গরম ধোঁয়া উঠছে। ভাতের প্লেট সামনে টেনে নিয়ে দোলা বলল, তোকে যেতে হবে না। আমি একাই যাব।
দুইদিন পরে গেলে অসুবিধা কী?
অসুবিধা আছে।
বলা যাবে না?
দোলা কথা বলছে না। সে মাছ খাবে বলেছে। তার জন্য বাটিতে মাছের পেটির টুকরা নিয়ে আসা হয়েছে। ফুলকপি আর সিম দিয়ে রান্না করা রুই মাছের পোনা। তিতাস কিছু বলেনি। সে ভাত সামনে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে।
 দোলা বলল, ওকে গোরুর মাংস এনে দাও। সলিড মাংস দেবে। হাড় আর চর্বিওয়ালা মাংস দেবে না।
তিতাসের মন নরম হয়ে এসেছে। তার ভালো লাগছে। দোলা খেয়াল রাখে সে কী খেতে পছন্দ করে। তার অপছন্দ কী। তিতাস হাত ধুয়ে এল। তাকে গোরুর মাংস দেওয়া হয়েছে। খেতে ভালো লাগছে। সে বেশ আরাম করে গোরুর মাংস দিয়ে গরম ভাত খাচ্ছে। 
 দোলা বলল, আজ বছরের শেষ দিন। পদ্মায় বছরের শেষ সূর্যাস্তের ছবি তুলতে চাই। যদি যেতে চাস তাহলে চারটার সময় রাকসুর ওখানে থাকিস। তোকে নিয়ে যাব।
তিতাস বলল, আমি যাব।
রিহার্সালে গিয়ে বিপত্তি হয়েছে। রিহার্সাল শুরু হয় বিকাল তিনটায়। রাকসু ভবনের দুই তলায় রিহার্সাল রুম। তিতাস তিনটার আগে পৌঁছে গেছে। মাসুম ভাইকে ঘটনা কীভাবে বলবে বুঝতে পারছে না। মাসুম ভাই আমুদে মানুষ। সবসময় হাসিখুশি থাকে। কারও মন খারাপ হলে মন ভালো করে দিতে পারে। তাকে কখনো রাগারাগি করতে দেখা যায় না। তবু ‘আজ রিহার্সাল করতে পারব না’, এই কথা মাসুম ভাইকে বলা যাচ্ছে না। সে এই নাটকের নির্দেশক। নাটক তার লেখা। মাসুম ভাই ডিসিপ্লিন পছন্দ করে। 
মনসুরকে খোঁজা হচ্ছে। মনসুর এখনো আসেনি। মাসুম ভাই বলল, মনসুর বাদ। শিশির তুই করবি গরিবুল্লাহর চরিত্র। গরিবুল্লাহ মার খেয়ে ফিরেছে। তার নাক থেতলে গেছে। চোখ ফুলে আছে। পুরো মুখে মার খাওয়ার চিহ্ন। তিতাস তুই গরিবুল্লাহকে প্রথম দেখবি। তোর ভেতর অদ্ভুত রিঅ্যাকশন হবে। গরিবুল্লাহ খারাপ লোক। মানুষজন তাকে অপছন্দ করে। তুইও অপছন্দ করিস। সে মার খেয়েছে দেখে তোর আনন্দিত হওয়ার কথা। তুই আনন্দিত হতে পারছিস না। অমন বীভৎসভাবে তাকে মার খেতে দেখে তোর মায়া হচ্ছে। এই যে একজন মানুষকে অপছন্দ করা আবার তার প্রতি মায়া হওয়া এরকম মিশ্র এক্সপ্রেশন থাকবে তোর মুখে।
তিতাস বলল, ভাই, আজ রিহার্সাল করতে পারব না।
রিহার্সাল করতে পারব না মানে! রিহার্সাল করতে পারবে না কেন?
আমার জরুরি কাজ আছে।
রিহার্সালের সময় অন্য কোনো কাজ থাকার কথা না।
দোলা পদ্মার পাড়ে ছবি তুলতে যাবে। ওর সঙ্গে যেতে হবে।
মাসুম ভাই আর কিছু বলেনি। তিতাসকে রিহার্সাল রুম থেকে বের করে দিয়েছে। তিতাস এসে শহিদ মিনারের ঢালে মন খারাপ করে বসে আছে। 
দোলা সব সময় এরকম করে। তিতাস ভাবে রাগ করবে। দোলাকে না বলবে। তিতাস রাগ করতে পারে না। দোলাকে না-ও বলা হয় না। 
তিতাসের বাড়ি কুষ্টিয়া। সেখানে সে বোধন থিয়েটারে নাটক করত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অনুশীলন নাট্যদলে কাজ করছে। দোলার সঙ্গে পরিচয় নাটকের সূত্র ধরে। শহিদ মিনার চত্বরে নাটকের শো ছিল। দোলা নাটকের ছবি তুলেছিল। একদিন আবুর ক্যান্টিনে দেখা। দুপুরবেলা। তিতাস গেছে খেতে। দোলাও এসেছে। দোলার পরনে জিন্সের প্যান্ট। গায়ে কলাপাতা সবুজ রংয়ের ফতুয়া। গলায় টাইডাই করা ওড়না প্যাঁচানো। দোলা সামনে এসে বলল, কোন ইয়ার?
তিতাস বলল, ফার্স্ট ইয়ার। 
দোলা বলল, তাহলে তুমি। আমিও এই বছর ভর্তি হয়েছি। ফাইন আটর্সে। আমার সাবজেক্ট গ্রাফিক্স। তোমার?
তিতাস বলল, সোসালওয়ার্ক।
দোলা কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করল। ছবি দেখাল। নাটকের বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি। বিশেষ পোজে তোলা তিতাসের কয়েকটা আলাদা ছবি। তিতাসের ছবি আলাদা করে কেন তুলেছে সেটা রহস্য। সেই রহস্য তিতাস কখনো জানতে পারেনি।
দোলাকে তিতাসের ভালো লেগে গেল। শুধু ভালোলাগা না। গভীরভাবে ভালো লাগা। সে মুগ্ধ হয়ে দোলার ছবি তোলা দেখে। দোলা পাখির ছবি তোলে। তিতাস মুগ্ধ হয়ে যায়। দোলা কাঠবিড়ালির ছবি তোলে। তিতাস মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। তার মনে হয় এর আগে কোনোদিন কাঠবিড়ালি এমন সুন্দর করে গাছে ওঠেনি। খাবারের দিকে মুখ বাড়িয়ে দেয়নি। তিতাসের দিন সুন্দর হয়ে উঠতে থাকে। 
সুন্দর দিন সুন্দর থাকে না। দোলা সব সময় তিতাসের সঙ্গে ঝগড়া করে। পরিচয়ের পর প্রথম দিকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করত। এখন বলে ‘তুই’। গতকাল দোলা রেগেছিল ভয়াবহ। চুল পেছনে টেনে বাঁধতে বাঁধতে বলল, এই জন্য তোকে সহ্য করতে পারি না। একটা কাজ ঠিকমতো করতে পারিস না। 
তিতাস মুখ শুকিয়ে বলল, ভুলে গিয়েছিলাম।
লাইব্রেরি থেকে বই তুলতে ভুলে গেলি? আমার পরীক্ষা। বইয়ের নাম যে লিখে দিয়েছিলাম সেই কাগজ আছে?
আছে। মানিব্যাগে রেখে দিয়েছি।
তুহিন স্যারের সঙ্গে কথা বলেছিস?
বলতে পারিনি। বলব।
তোকে আমার জন্য কিছু করতে হবে না। প্লিজ তুই আমার জন্য কিছু করবি না। আমি আজ আবুর ক্যান্টিনে খাব না। অন্য কোথাও খাব। তুই আমার সঙ্গে আসবি না। 
দোলা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে চলে গেল। তিতাস গেল তার পেছন পেছন। দোলা বলল, তুই যদি আমার সঙ্গে আসিস তাহলে আজ দুপুরে আমি না খেয়ে থাকব। 
তিতাস দোলার সঙ্গে গেল না। সে মেসে চলে গেল। মেস বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে। ভার্সিটির হলে সে এখনো জায়গা পায়নি। কবে পাবে তাও জানে না। তিতাস গতকাল দুপুরে কিছু খায়নি।
দোলা চলে এসেছে। রিকশা থেকে হাত নেড়ে বলল, তাড়াতাড়ি চলে আয়। দেরি হয়ে গেছে। পদ্মার পাড়ে যেতে যেতে সূর্য ডুবে যাবে।
তিতাস রিকশায় উঠল। রিকশা চলতে শুরু করেছে। দোলা হাতের ট্রাইপড তিতাসের হাতে দিয়ে দিল। তিতাস কোলের ওপর ট্রাইপড রেখে দিয়েছে। দোলা রিকশাওয়ালাকে বলল, জোরে যাবেন।
রিকশাওয়ালা মনে হলো খুশি হয়েছে। সে রিকশা নিয়ে ছুটে যেতে থাকল। দোলার কাঁধে ব্যাগ। গলায় ক্যামেরা ঝুলছে। ক্যামেরায় লাগানো লেন্স বেশ বড়। দোলা লেন্স চেপে ধরে আছে। তিতাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, মাসুম ভাই খুব বেশি বকা দিয়েছে?
তিতাস বলল, না।
তাহলে বৌ মরা বানরের মতো মুখ শুকিয়ে আছিস কেন?
তিতাস কথা বলল না। রিকশা লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে। তিতাসের মনে হলো সে ছিটকে পড়ে যাবে। রিকশাওয়ালাকে বলা দরকার রিকশা আস্তে চালাতে। তিতাস কিছু বলল না। একহাতে কোলের ওপর ট্রাইপড আর অন্য হাত দিয়ে রিকশার হুড় আঁকড়ে বসে থাকল। দোলাও রিকশার হুড় আঁকড়ে ধরে বসে আছে।
ওরা যখন পদ্মার পাড়ে পৌঁছাল তখন সূর্য ডুবছে। দোলা রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমেছে। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে পানির কাছাকাছি ছুটে গেছে। তিতাস যাচ্ছে ধীরেসুস্থে। তার মন পড়ে আছে নাটকের রিহার্সালে। একবার মনে হচ্ছে আজ না আসলেও হতো। পরশুদিন নাটকের শো। আবার মনে হচ্ছে আজ না এলে দোলা ভীষণ রাগ করত। হয়তো আর কোনোদিন কথা বলত না। দোলা ওর সঙ্গে কথা বলবে না ভাবলে তিতাসের কষ্ট হয়।
 দোলাকে সে বুঝতে পারে না। সব সময় ওর সঙ্গে ঝগড়া করে। রাগারাগি করে। তবু তিতাস তাকে ছেড়ে থাকতে পারে না। দোলার ভেতর আকর্ষণ আছে। কীসের সেই আকর্ষণ তিতাস জানে না।
রাস্তার সঙ্গে পদ্মা নদীর বাঁধ। সেখান থেকে নদীর পানি অনেক দূরে। মাঝখানে ধু ধু বালি। পানির কাছে হেঁটে যেতে হাঁপিয়ে উঠতে হয়। নদীর পানির ওপর হালকা কুয়াশা। সূর্য অর্ধেকটা সেই কুয়াশার ভেতর ঢুকে পড়েছে। দোলা এগিয়ে গেছে নদীর কাছে। সেখানে ছোট্ট বালুচরের মতো। ওপাশে নৌকা বাঁধা।
হাতের বামদিকে একটা নৌকা। সেই নৌকায় চড়ে মানুষজন নদীতে ঘুরতে যায়। নৌকায় দুইজন বসে আছে। আর দুই একজন মানুষ পেলে মাঝি নৌকা ছেড়ে দেবে।
ছোট্ট বালুচরের মতো ওই জায়গায় যাওয়ার জন্য তিতাস ঘোরাপথে না গিয়ে কোনাকুনি গেল। সামনে কাদা শুকিয়ে শক্তমতো হয়ে আছে। কাদার ওপাশে সেই বালুচর। সেখানে দাঁড়িয়ে দোলা সূর্যাস্তের ছবি তুলছে।
কাদায় পা দিতেই তিতাস বুঝতে পারল সে ভুল করে ফেলেছে। কাদায় পা আটকে যাচ্ছে। আঠালো মাটি। ওপরটা শুকিয়ে আছে। ভেতরে নরম। এক পা তুলে আরেক পা ফেললে সেই পা আটকে যাচ্ছে। ফেরা দরকার। তিতাস ফিরতে পারল না। সে দ্রুত সামনের দিকে যেতে গিয়ে পুরোপুরি কাদায় আটকে গেল।
তিতাস কী করবে বুঝতে পারছে না। সে দোলার দিকে তাকিয়ে আছে। দোলা বছরের শেষদিনের সূর্যাস্তের ছবি তুলছে।  সে ছবি তুলছে আয়োজন করে। ক্যামেরা ট্রাইপডে আটকেছে। সূর্যের লাল আভা দেখা যাচ্ছে। সেই আভা কিছুটা পড়েছে পানিতে। দোলা যতœ করে পানির ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া সূর্যের কমলা আলোর ছবি তোলার চেষ্টা করছে।
তিতাস উঁচু গলায় বলল, আমি আটকে গেছি। কাদা থেকে পা তুলতে পারছি না।
দোলা পেছনে তাকায়নি। তার চোখ ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে। দোলা বলল, ন্যাকামি করিস না। যদি আসতে ইচ্ছে না করে ওখানে বসে থাক।
তিতাসের দুই পায়ের গোড়ালির বেশ ওপর পর্যন্ত কাদার ভেতর আটকে আছে। সে কাদা থেকে পা তুলতে পারছে না। চটচটে নরম কাদা। পায়ে জুতা আছে। তিতাস জুতা খুলে ফেলার চেষ্টা করল। পারল না। 
সূর্য ডুবে গেছে। কিছুক্ষণের ভেতর অন্ধকার হয়ে আসবে। তিতাস বলল, উঠতে পারছি না। কাদা খুব নরম আর আঠালো। পা টেনে তোলা যাচ্ছে না।
দোলা ঝট করে ঘুরে তাকিয়েছে। তিতাস হাঁটু-কাদায় দাঁড়িয়ে আছে। তার দুই পা কাদার ভেতর হাঁটু পর্যন্ত ডুবে গেছে। দোলা সামনে এগিয়ে এসে বলল, ঘটনা কী?
তিতাস বলল, ঘটনা জানি না। এদিক দিয়ে যেতে গিয়ে কাদায় আটকে গেছি। এখন আর উঠতে পারছি না। মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে নীচে নেমে যাচ্ছি।
দোলা খানিকটা আতঙ্কিত হয়েছে। সে বলল, বলছিস কী! পা টেনে তুলে উঠে আয়।
পা টেনে তুলতে পারছি না।
দোলা সামনের দিকে এগিয়ে এল। সামনে নরম কাদা। ওপর থেকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে শক্ত। কাদায় পা দিলে দেবে যাচ্ছে। দোলা পিছিয়ে গেল।
তিতাস শরীর বাঁকিয়ে মাটির ভেতর দুই পা নাড়াল। মাটি সরে গিয়ে আবার পায়ের ওপর এসে জমাট বাঁধছে। হাত দিয়ে মাটি সরানোর চেষ্টা করেছে তিতাস। মাটি সরানো যায়নি। থকথকে কাদা ঢলঢল করে চলে এসেছে। দুই পায়ের ওপর কাদা চেপে আছে। কিছুতেই সেই কাদা সরানো যাচ্ছে না। কাদার ভার অনেক বেশি। তিতাস পা নাড়াতে পারছে না। 
নৌকার মাঝির দিকে তাকিয়ে তিতাস চিৎকার করে বলল, ও মামা, লগিটা দেন। কাদায় আটকে গেছি। সাপোর্ট দরকার।
নৌকার মাঝি নৌকা ছেড়ে দিচ্ছে। সে আরও দুইজন মানুষ পেয়েছে। তারা ওই নৌকায় যাবে। নৌকার মাঝি ঘটনা বুঝে ফেলেছে। সে বলল, এখন আর করার কিছু নেই, মামা। আল্লাহর নাম নেন। 
দোলা ছুটে গেছে নৌকার মাঝির কাছে। দোলা বলল, লগিটা দেন। আমি ব্যবস্থা করছি। 
মাঝি নৌকা পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। সে বলল, ব্যবস্থা করার কিছু নেই। তাকে হামাগুড়ি দিয়ে আসতে বলেন। মুক্তিযুদ্ধের মতো।
মাঝির কথা তিতাস শুনতে পেরেছে। হামাগুড়ি দিতে পারলে শরীরের ভর মাটিতে ছড়িয়ে পড়বে। তাতে কাদার ভেতর দেবে যাওয়ার আশংকা কম। সে দুই হাত মাটিতে দিয়ে দুই পা টেনে তোলার চেষ্টা করল। তুলতে পারল না। দুই হাত কবজি পর্যন্ত কাদায় আটকে গেল। তিতাস কাদা থেকে দুই হাত ঝাড়া দিয়ে তুলে ফেলল।
মাঝি নৌকা নিয়ে চলে গেল। নদীর পাড়ে যারা বেড়াতে এসেছিল তারা ফিরে গেছে। কুয়াশার সঙ্গে অন্ধকার মিশে চারপাশ অস্পষ্ট হয়ে আসছে। সুনসান নদীর পাড়। শুধু নদীর পানি পাড়ে আছড়ে পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে।
 দোলা কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে ফেলল। গলা থেকে ক্যামেরা নিয়ে ব্যাগের ভেতর রাখল। শুকনো শক্ত মাটির ওপর ব্যাগ রেখে দিয়েছে। ট্রাইপড আনেনি। বালিও ওপর তখনো ট্রাইপড দাঁড় করানো। দোলা পা থেকে স্যান্ডেল খুলে রেখে তিতাসের দিকে এগিয়ে এল। আঁতকে উঠেছে তিতাস। সে অস্থির হয়ে বলল, চোরাবালি। আর এগুনো ঠিক হবে না।
দোলা অসহায় বোধ করছে। সে হামাগুড়ি দিয়ে তিতাসের দিকে এগুনোর চেষ্টা করল। এগুতে পারল না। এগুতে গেলে নরম কাদার ভেতর আটকে যাচ্ছে। তিতাস তলিয়ে গেছে আরও খানিকটা। দুই হাঁটু ছাড়িয়ে প্রায় কোমর পর্যন্ত কাদায় আটকে গেছে। 
দোলাকে উত্তেজিত দেখাচ্ছে। সে অস্থির হয়ে চিৎকার করতে থাকল, কেউ আছেন? আসবেন এদিকে? একজন মানুষ কাদায় আটকে গেছে। উঠতে পারছে না। 
কেউ কোনো সাড়া দিল না। দোলা ছুটতে ছুটতে বাঁধের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে কেউ নেই। তিতাসকে এখানে একলা রেখে দোলা বেশিদূর যেতে পারল না। সে ফিরে এসেছে। আবার নদীর ঘাটের দিকে ছুটে গেল। মাঝনদীর দিকে তাকিয়ে দেখল কোনো নৌকা আসছে কিনা। কোনো নৌকার সন্ধান পাওয়া গেল না।
 দোলা অস্থির হয়ে পড়েছে। সে ধু ধু বালির ভেতর ছোটাছুটি করতে থাকল। আশপাশে কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। কোমর পর্যন্ত তলিয়ে গেছে তিতাস কাদার ভেতর। তার মনে হচ্ছে সে আর কোনোদিন এখান থেকে উঠতে পারবে না। কেউ তাকে তোলার জন্য আসবে না। তিতাসের মাথার ভেতর শূন্য হয়ে গেছে। তার ভয় লাগছে। কীসের ভয় সে জানে না।
 দোলা অস্থির হয়ে নদীর পাড়ে ছোটাছুটি করতে থাকল। কী করবে বুঝতে পারছে না। একটা নৌকা এসে ভিড়েছে পাড়ে। নৌকা থেকে একজন ছেলে আর একজন মেয়ে নেমে পড়ল। দোলা ছুটতে ছুটতে তাদের কাছে গিয়ে বলল, প্লিজ একবার আসেন। একজন মানুষ কাদায় আটকে গেছে। উঠতে পারছে না। তলিয়ে যাচ্ছে কাদার ভেতর।
 ছেলেটা আর মেয়েটা এগিয়ে এসেছে। আবছা আলোয় তারা দেখল একজন মানুষ কাদার ভেতর দাঁড়িয়ে আছে। তার কোমর পর্যন্ত তলিয়ে গেছে। ছেলেটা বলল, এখন কী করবেন? ফায়ার ব্রিগেডকে খবর দিতে হবে।
মেয়েটা বলল, হল বন্ধ হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি চলো।
ওরা চলে গেল। দোলা দুই হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল মাটির ওপর। তার ভীষণ কান্না পাচ্ছে। দোলা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বলল, তোকে আমি খুব ভালোবাসি, তিতাস। খুব ভালোবাসি। তুই কোনোদিন বুঝতে পারিসনি। তোর জন্য আমার কষ্ট হচ্ছে। কী করব এখন আমি বল। 
তিতাসের মনে হচ্ছে ওর আর কোনো কষ্ট নেই। কিছুক্ষণ আগে ভীষণ পানি পিপাসা পেয়েছিল। এখন পানি পিপাসা নেই। বুঝতে পারছে ধীরে ধীরে এই মাটিতে ডুবে যাবে । কাদা কোমর ছাড়িয়েছে। 
নৌকার মাঝি ছুটে এসেছে। তার বয়স বেশি না। পঁচিশ/ছব্বিশ বছর বয়স হবে। লিকলিকে শরীর। গায়ের রং কালো। যথেষ্ট কালো। অন্ধকারে তাকে ভালোমতো দেখা যাচ্ছে না। মাঝির গায়ে গোলগলা ফুলহাতা গরম কাপড়। পরনে লুঙ্গি। সে লুঙ্গির নীচে হাফপ্যান্ট পরেছে। মাঝি লুঙ্গি খুলে ফেলল। সে হাফপ্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে। দোলা মাঝির দিকে তাকাল। মাঝি বলল, মানুষজনকে খবর দেন। দেখি কিছু করতে পারি কিনা। এইখানে মানুষ পড়ে গেলে তোলা মুশকিল।
মাঝি হামাগুড়ি দিয়ে তিতাসের দিকে এগিয়ে গেল। দোলা বিস্মিত হয়েছে। সে এই মাঝিকে দেখেনি। তাকে ডাকেনি। সে নিজে থেকে এসেছে। মাঝি চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে তিতাসের দিকে এগিয়ে গেল।
চারদিকে অন্ধকার হয়ে এসেছে। আশপাশ ভালোমতো কিছু দেখা যাচ্ছে না। কোমর ছাড়িয়ে তিতাসের পেট পর্যন্ত কাদার ভেতর তলিয়ে গেছে।  
তিতাসের পেছনে মাঝি খানিকটা শক্ত মাটি খুঁজে পেয়েছে। সে সেখানে হামাগুড়ি দিয়ে আছে। তিতাসকে বলল, আমাকে জাপটে ধরেন। ভয় পাবেন না। শরীর দোলাতে থাকেন। মাটি সরে গেলে আপনাকে টেনে তুলব। আপা লোকজন ডাকতে গেছে।
তিতাস মোচড় দিয়ে শরীর বাঁকানোর চেষ্টা করল। সে শরীর বাঁকাতে পারল না। মাঝির মুখ দেখা যাচ্ছে না। মাঝি সামনে ঝুঁকে এসেছে। তিতাস মাঝিকে আঁকড়ে ধরল। তার এখন আর কিছু মনে হচ্ছে না। মাথার ভেতর সবকিছু কেমন ফাঁকা হয়ে আসছে। সে অল্প অল্প হাঁপাচ্ছে। তিতাসের কখনো শ্বাসকষ্ট হয়নি। এখন হচ্ছে। মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসবে।  
দোলা মাসুম ভাইকে ফোন করতে চাইল। মাসুম ভাইয়ের ফোন নম্বর তার কাছে নেই। তিতাসের মোবাইল ফোন নিশ্চয় তার প্যান্টের পকেটে। কাদার ভেতর তলিয়ে গেছে। মাসুম ভাইয়ের মোবাইল ফোন নম্বর তিতাসের মনে আছে কিনা জিগ্যেস করা যায়। দোলা তিতাসকে কিছু জিগ্যেস করল না।
সন্তোষের ফোন নম্বর পাওয়া গেছে। সে অনুশীলন নাট্যদলে নাটক করে। দোলা সন্তোষকে ফোন করল। ঘটনা শুনে সন্তোষ থমকে গেছে। দোলা ‘হ্যালো-হ্যালো’ করে যাচ্ছে। সন্তোষ কিছু বলছে না। দোলা ছুটে আবার তিতাসের কাছে চলে এল।
তিতাস আরও খানিকটা কাদার ভেতর তলিয়ে গেছে। কাদা এসে ঠেকেছে তার বুকে। শ্বাস নিতে এখন আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে। মাঝিকে দেখে হতাশ মনে হচ্ছে। সে কাতর গলায় বলল, আপা কী করব? মানুষজন কোথায়?
দোলা বলল, কী হয়েছে? 
মাঝি বলল, মামা তো তলিয়ে যাচ্ছে। তাকে আটকাতে পারছি না। 
চমকে উঠেছে দোলা। তিতাস কাদার ভেতর তলিয়ে যাচ্ছে। তাকে মাঝি আটকাতে পারছে না। দোলার আবার কান্না পাচ্ছে। সে ছুটে নৌকাঘাটের দিকে গেল। যে নৌকা তখন ছেড়ে গেছে তার ফিরে আসার কথা। সেই নৌকা ফিরে আসেনি। দোলা ফিরে এল তিতাসের কাছে। 
মাঝি বলল, ওই নৌকা আর এই ঘাটে ফিরবে না। সে অন্যঘাটে চলে গেছে। 
দোলা হামাগুড়ি দিয়ে তিতাসের কাছে চলে এল। এইপাশের মাটি খানিকটা শক্ত। মাঝি জানে। দোলা আগে বুঝতে পারেনি। মাঝি শক্ত করে চেপে ধরে আছে তিতাসকে। সে অস্থির গলায় বলল, আপা, মানুষজন কই। মামা দেখি আরও তলিয়ে যাচ্ছে। আমার শরীর আটকে আসছে। আমি তো আর তাকে ধরে রাখতে পারছি না। ছেড়ে দিতে হবে।
বুক শুকিয়ে এসেছে দোলার। সে দূরে বাঁধের দিকে তাকাল। সন্তোষ কিছু বলল না। সে নিশ্চয় মাসুম ভাইকে ঘটনা জানাবে। ঘটনা জানার পর মাসুম ভাই চুপ করে বাসে থাকবে না। দলবল নিয়ে চলে আসবে।
মাসুম ভাইদের বাঁধের ওদিক দিয়ে আসার কথা। ওদিকে গাঢ় অন্ধকার। কেউ আসছে না। দোলা মাঝিকে আঁকড়ে ধরল। সে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেছে। দোলা বলল, ওকে ছেড়ে দেবেন না। ও ছাড়া আমার আর কেউ নেই। ওকে আমি ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।
কান্নায় দোলার গলা বুজে এসেছে। তিতাস তাকিয়ে আছে অন্ধকারের দিকে। অন্ধকারের সঙ্গে কুয়াশা মিশেছে। হালকা ঠান্ডা পড়ছে। খুব বেশি নিস্তব্ধ চারপাশ। মাঝি বলল, এভাবে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। এই জায়াগার মাটি খারাপ। নীচে চোরাবালি। মানুষ আটকে গেলে বাঁচার উপায় থাকে না।
দোলা খামচি দিয়ে মাঝির দুই হাত চেপে ধরল। মাঝি বলল, অল্পখানিকটা ডুবলে টেনে তোলা যেত। এখন তাকে আর তোলা যাবে না। আর কিছুক্ষণ থাকলে আমিও তলিয়ে যাব।
 দোলা আবার তাকাল উঁচু বাঁধের দিকে। অন্ধকার ওখানে জমাট বেঁধেছে। দোলা লম্বা হয়ে মাটির ওপর শুয়ে পড়ল। তার পা শক্ত মাটিতে ঠেকিয়ে রেখেছে। সে ঝুঁকে আছে তিতাসের মুখের কাছে। অন্ধকারে তিতাসের মুখ আবছা দেখা যাচ্ছে। দোলা তিতাসের চোখের দিকে তাকাল। সেই চোখে ভয় আর আতঙ্ক থাকার কথা। তিতাসের চোখ বিষণ্ণ, ক্লান্ত। মনে হচ্ছে ওর ঘুম পাচ্ছে। 
দোলা কাদামাখা হাতে তিতাসের মুখ স্পর্শ করল। তিতাসের গাল ঠান্ডা। শীত আর দোলার হাতের কাদা মিশে ঠান্ডা হয়ে আছে। দোলার মনে হলো বুঝি ভয়ে তিতাসের শরীর ঠান্ডা হয়ে এসেছে। বুক পর্যন্ত ডুবে গেছে তিতাসের শরীর। মাঝি বুঝতে পারছে না সে কী করবে। কতক্ষণ এভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে। সে শক্ত করে তিতাসকে জাপটে ধরে থাকল।
দোলা ফিসফিস করে বলল, মাসুম ভাই আসবে। সন্তোষকে খবর দিয়েছি। তুই একদম ভয় পাবি না।
তিতাস কিছু বলল না। দোলা বলল, তুই খুব ভালো। বেশি ভালো। অনেক বেশি ভালো। তুই এত ভালো কেন, তিতাস?
দোলার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চাঁদ উঠেছে আকাশে। কৃষ্ণপক্ষের ম্লান চাঁদ। কুয়াশায় সেই চাঁদকে ঘষা চাঁদ মনে হচ্ছে। চাঁদের ফিকে আলোতে তিতাসকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে। সে দুই চোখ মেলে দোলার দিকে তাকাল। 
চমকে উঠেছে দোলা। তিতাসের মুখ ওর হাত থেকে ফসকে গেছে। আচমকা আরও খানিকটা কাদায় তলিয়ে গেল তিতাস। মাঝি তিতাসের দুই হাতের নীচে হাত দিয়ে তার বুক আঁকড়ে ধরে রেখেছে। দোলা বুঝে ফেলেছে আর কিছুক্ষণের ভেতর তিতাস পুরোপুরি মাটির নীচে তলিয়ে যাবে। 
নরম কাদার ভেতর হাতড়ে তিতাসের হাত খুঁজে পেয়েছে দোলা। সে তিতাসের হাত শক্ত করে চেপে ধরল। তিতাস তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। দোলা মাটিতে গাল পেতে দিয়েছে। দোলার মুখের সামনে তিতাসের মুখ।
দোলা কাঁদছে। ওর চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়েছে। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তিতাস। দোলা শক্ত করে তিতাসের হাত চেপে ধরে নরম কাদায় গাল ঘষল। 
বাঁধের দিকে অনেকগুলো আলোর বিন্দু। তারার মতো জ¦লছে। আলোগুলো ছুটে আসছে। মাসুম ভাইয়ের গলা শোনা যাচ্ছে। মাসুম ভাই চিৎকার করে ডাকছে, তিতাস! তিতাস তুই কোথায়?
মাসুম ভাই নাটকের দলের ছেলেদের নিয়ে চলে এসেছে। আসার সময় দড়ি আর শক্ত কাঠ সঙ্গে এনেছে। দোলা আনতে বলে দিয়েছিল সন্তোষকে। মোবাইল ফোনের টর্চের আলো ফেলে ওরা এগিয়ে আসছে।
চাঁদ উঠে গেছে আরও খানিকটা ওপরে। চাঁদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে আছে তিতাস। এমনভাবে জোছনা দেখা হয়নি কোনোদিন। যদিও ম্লান জোছনা। কুয়াশা সরে গেছে। চাঁদের আলো এসে পড়েছে তিতাসের মুখে। দোলা কাঁদছে। প্রবল ভালোবাসার কান্না তাকে অস্থির করে তুলেছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন