মেনু

বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৬

নির্ঝর নৈঃশব্দ্য : সপ্তমসন্ধ্যা


   প্রহেলিকা বিবশ হয়ে বাজে, খানিক রাতুল। সেই লালরং দিন এখনো লেগে আছে সেই বনের পলাশে আর কৃষ্ণচূড়ায়, পারিজাতে আর শিমুলে। আর আমাদের শিরার ভিতর একটি নদী স্রোতাধীর হয়ে আছে। ব্যাবিলন বুঝেছিলো আকাশের ছাই থেকে হবে না সুরম্য উদ্যান। রাতে, বনের মধ্যে যেইসব গাছ দাঁড়িয়ে থাকে, প্রত্যেকেই একা। এক একটা গাছ তার ডালময় অন্ধ্কার পাতা মেলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। পাতার কোরকে হাওয়া রেখে গেলে একটি প্রজ্ঞান, আমরা ভাবি শ্লেষ্মা জড়ানো পাতালের নাম। শামুকের ধীর গতি বাচাল হয়।  সভ্যতার নাম ভিজে যায়। আঁকাবাঁকা তার পরিক্রম। আর্দ্রতা দিয়ে মুছে দাও করতল। করতলে উড়ে নদীদল। ক্রমে অপস্রিয়মাণ নির্জলা নদ।সমুদ্রপাড়ের গাছবন হেসে হেসে হাঁস। তোমার হাতে মেলেছে ধরা আমাদের মিল। হাঁসের পালক ভিজে না। রূপকথার দমোদর সন্তরণ শেষে ঈশ্বর বসে থাকে ল্যাম্পপোস্টের নিচে, লিখে ফেলে আদর্শলিপি।


   জগতের কিছুই অমূলক নয়। দুনিয়ার মতো জগত শব্দটা আমি কখনো লিখিনি। লিখেছি পৃথিবী। কিন্তু আজকে লেখার পেছনের কারণ হলো অমূলক নয় জিনিশটা বুঝাইতে চাই। কোথাও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। শস্যক্ষেতের ফলমূল অঝর ধারায় ঝরে যাচ্ছে শিশুদের পাঁজরে। এই কান্নার উৎস লেখা ছিলো না কোথাও। তারপরও ব্যথা বাজে অযাচিত চোখের তারায়, লালনের হাহাকারে, পরীদের ডানার ভাঁজে, আযানের গমকে। কোথাও ভূমিকম্প হচ্ছে। এইবার হলে ছাদে উঠে যাবো ভেবে কড়িকাঠের নিচেই দাঁড়িয়ে থাকি। সপ্তমসন্ধ্যার আকাশের তারাদের কথা ভাবি। তাদের নাম ভুলে যাই ব্যথার ওপারে। এইসব লিখে রাখি যাকিছু মনে পড়ে। তারাদের চোখের পাড়ে ঢেউ ভাঙে কেউ। একটি জাল শুকোয় জলাধারে একা। জানলা আছে ওপাড়ে জেলেদের জালে।

   ছেড়ে আসা শৈশবে কতোদিন আমি ভেবেছিলাম, আমাদের কচুপাতা বনের সকল পাতা একদিন পাতাবাহার হয়ে যাবে। পাতাপোড়া ঘ্রাণ আসে বিষাদের পাশে। পাতাবাহারে অশ্রু ছলছল টপ টপ।  কোনোদিন চুম্বনে আর মৈথুনে ঘুমহীন সাজ। রোদে বোনা দিনে গাছেরা রোদের পাপেরই সহচর। সুদীর্ঘ ছায়াচুর মাঠের কাঁকালে কম্পমান। হাতের কাছে পড়ে থাকে নগ্ন গ্লাস, উল্টো করে বসালে নিজেই আধেয়। তাকে ধরে যে তল—সমতল মাঠে গহ্বর গুপ্ত আছে, যদি সে আনন্দ হয় গভীর কান্নার পেটে।

   সালভেদর দালির ছবি আমার তেমন ভালো লাগে না কেনো তাহা এইখানে বলিব না। তারপরও একদিন দুপুরবেলা সে আমাকে ডেকে বলেছিলো, ‘শোন পাগলা, আমি মদ খাই না। আমি নিজেই মদ।’ সেদিন আমি তার গাণ্ডীবসদৃশ গোঁফের দিকে তাকিয়ে নীরবে হেসেছিলাম। কথাটা খুবই মনে ধরেছিলো আমার। সেই থেকে আমিও মনে হয়, মদ হওয়ার চেষ্টাতেই আছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন