ক্ষয়
নাভির নীচে শাড়ি পরলে সুন্দর লাগবে। নাস্তার টেবিলে কথাটা বলল কবির। আমি কিছু বললাম না। ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলাম। বিয়ের সতের দিনের মাথায় স্বামীর মুখ থেকে প্রথম একটা রোমান্টিক কথা শুনলাম। কবির পুরোটা নাস্তা কখনোই শেষ করে না। মনে হচ্ছিল আজ সময় লাগলেও পুরোটা শেষ করবে, কিন্তু ধারণা ঠিক হলো না। উঠে পড়ল। তারপর দ্বিতীয়বারের মতো চমকে দিয়ে বলল, ফারহানা, বাকিটুকু ফেলে না দিয়ে তুমি খেয়ে নিও যদি তোমার খারাপ না লাগে।
আমি শুধু মাথা নাড়লাম। কবির অফিসে চলে গেল।
মেয়েরা নাকি অল্পতে খুশি হতে জানে না। কথাটা হাজারবার শুনেছি। আজ আমার এত্ত খুশি লাগছে তা কাউকে বোঝাতে পারবো না। সব কথা তো আর সবাইকে খুলে বলা যায় না। বিয়ের পরের দিনই সাথি ফোন করে। তারপর ধাম করে প্রশ্ন করে বসে, কীরে ফারু সোনা, দুলাভাই ঠিক আছে তো?
বুঝতে না পেরে বলি, কী বলিস?
বিয়ের রাতে সত্যিই আমি খুব আড়ষ্ট ছিলাম। হঠাৎ একটা অচেনা পুরুষ মানুষের সঙ্গে এক বিছানায়। বিয়ের আগে ভাবলেও আমার গা ঘিন ঘিন করত। ভাবটা বিয়ের প্রথম রাতেও ছিল। খুব ভয় পাচ্ছিলাম। আমার মনের কথা কবির বুঝতে পেরেছিল কিনা জানি না, নিজ থেকেই বলেছিল, রাত জাগবে নাকি ঘুমিয়ে পড়বে?
আমি কিছু বলার আগেই কবির লাইট অফ করে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। খুশি হয়েছিলাম। নিশ্চয়ই কবিরও আর দশটা ছেলেদের মতো নয়। ব্যক্তিত্ববান। অাস্তে আস্তে সম্পর্ক হতে তো বাঁধা নেই। তাছাড়া স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তো আর ফুরিয়ে যাবার না। দ্বিতীয় দিনেও স্বামী আমার সাধু পুরুষটি হয়ে রইলো। কেমন সুফী সুফী ভাব। মনে হচ্ছে কেউ ওকে দিব্যি দিয়েছে বলেছে, খবরদার! এই মেয়ের কাছ থেকে দশ হাত দূরে থাকবি। হাহা। ভাবলাম, আমার সঙ্গে মজা করছে হয়ত। সারাদিন বাইরে কাটিয়ে রাত করে ফিরলো আমার জামাই। ক্লান্ত দেখাচ্ছিল ওকে। বিছানায় আসতেই ঘুমিয়ে পড়ল। ওর মুখ দেখে মায়া হলো। আহারে গুটু গুটু লক্ষ্মী বাবুটা আমার।
তৃতীয় দিন আমাদের বাড়ি আসি। রাতে অপেক্ষা করছি কবিরের জন্য। ওর কাছ থেকে কোনো সাড়া নেই। নিষ্প্রতিভ একটা মানুষ। জোর করতেই বলল, অপরিচিত জায়গা...।
- ওরে আমার লজ্জার জাহাজ...
না হেসে পারলাম না আমি।
চতুর্থ রাতেও আমার বিবাহিত জীবনের গল্প পাল্টালো না। কবির বলল, আমি মেয়েদের শরীরে অভ্যস্ত নই ফারহানা।
নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। ভেতরে ভেতরে খুশি হলাম। ওর একটা হাত তুলে নিয়ে বললাম, গুড বয়। এখন থেকে অভ্যস্ত হয়ে যাবে...।
- আসলে তুমি আমার ব্যাপারটা বুঝতে পারবে না। মুখে মে মাসের মেঘ জমিয়ে বলল কবির। আমি ফিক করে হেসে দিলাম। জোর করতেই ও সরে গেল।
- আচ্ছা বাবু সোনা, তুমি কি আরেকটু সময় চাচ্ছো?
- দেখি। তোমাকে জানাবো।
পাশ ফিরে বলল কবির। আমি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। কবির নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে ফেলল। রাগের বদলে হাসিতে পেট ফেটে আসতে চাইল আমার। কোনরকমে কবিরের পিঠে মুখ চাপা দিলাম। রাত কেটে গেল।
দিন যায়। রাত যায়।
সতেরতম দিনে ঈশ্বর মুখ তুলে চাইলেন। কবির জানে না, ওর ফেলে রাখা নাস্তাটুকু আমি কত্তো ভালোবাসা নিয়ে খাই। আজ মনে হয় অনেক সময় নিয়ে ওর অর্ধেক নাস্তাটুকু খেলাম। সারাদিন আমার খুব আনন্দ লাগল। দুপুরটা রান্না ঘরে কাটল। আচ্ছা কবিরের পছন্দের খাবার কী? লজ্জা লাগল আমার। স্বামীর পছন্দের খাবারটা এখনো জানি না। ধ্যাত্। ফোন করলাম ওকে। ফোনে ও যা বলল, শুনে তো আমি থ। আলু ভর্তা, ডাল আর ডিম ভাজি। আমার হাসি শুনে কবির যেন লজ্জা পেল। কিছু বলার আগে ফোন রেখে দেয় কবির।
বিকেলটা চড়ুই ডানায় ভর করে কেটে গেল। কবির ফিরল সন্ধ্যার পর। এর আগে কখনো ওর হাতে কিছু দেখিনি। আজ প্রথম। আইসক্রীম। ওকে তো বলা হয়নি- আইসক্রীম আমার খুউব প্রিয়।
রাত কেন বাড়ছে না। ভেতরে রাগ হচ্ছে আমার। শাড়ি পড়েছি অনভ্যস্ত হাতে। পায়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে পেটের সামনে থেকে এখুনি খুলে পড়ে যাবে। কবিরের সামনে গিয়ে দাঁড়াই।
- কেমন লাগছে তোমার বউকে?
- সুন্দর।
- শুধুই সুন্দর?
- হ্যাঁ সুন্দরই তো লাগছে। খারাপ লাগলে তো বলতাম।
- তোমার আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না?
- কি বলছো উল্টাপাল্টা? কবির কথায় কপটতা ফুটাতে ব্যস্ত। কিন্তু পুরোপুরি সফল হলো না। আমি কবিরের কানে কানে আমার ইচ্ছেটার কথা বলতেই ও কেমন নিষ্প্রভ হয়ে গেল। চেপে ধরলাম। কবির অসহায়ের কণ্ঠে বললো, আমারও ইচ্ছে হয়, কিন্তু সাহস হয় না...!
- জানি তো সোনা।
- তুমি কিছুই জানো না ফারহানা-
- জানি না? বলো তাহলে-
- কিছু কথা থাকে যা স্ত্রীকেও বলতে বাধে...তাছাড়া
- স্ত্রী আর ডাক্তারের কাছে কথা চেপে লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়। হাসি মুখে বলি। তবুও মুখ খুললো না কবির। জোর করতেই বলল, দাড়াও কাগজে লিখে দেই...।
আমি দৌড়ে গেলাম কাগজ কলমে জন্য। ফিরেও এলাম দ্রুত। কবির অনীহাভরে হাত বাড়াল। বলি, তুমি তোমার কথা সুন্দর করে লিখে ফেল, আমি চা করে আনছি।
ইচ্ছে করেই কিচেনে সময় নিলাম। রুমে ফিরে এসে দেখি কবির নেই। কোথায় গেল? ব্যালকনিতে বোধহয়।
বিছানার ওপর কলম চাপা দেয়া কাগজটি দ্রুত হাতে তুলে নিলাম-
"ফারহানা, আই এ্যম ইউজড টু অব মাস্টারবেশন। ভয় হয়। যদি...!"
আমি কিছুই বুঝলাম না। ছুটে গেলাম ব্যালকনিতে। নেই। নিশ্চয় বাথরুমে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম কবিরের জন্য...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন